ভারত রেকর্ড ৮ বার Asia Cup জয় করে এই প্রতিযোগিতায় তাদের আধিপত্য দেখিয়েছে। রোমাঞ্চকর জয় থেকে শুরু করে স্মরণীয় মুহূর্ত ভারতের Asia Cup যাত্রার গল্প আবিষ্কার করুন, যেখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জয় ও নজরকাড়া পারফরম্যান্স। এই মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্টে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও অর্জনগুলির দিকে এক নজর দিন।
প্রথম Asia Cup জয় – ১৯৮৪ (ওডিআই)

১৯৮৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথম Asia Cup অনুষ্ঠিত হয়। এটি রাউন্ড-রবিন ফরম্যাটে খেলা হয়েছিল, কোন ফাইনাল ম্যাচ ছিল না। ভারত শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। টুর্নামেন্টে মাত্র তিনটি দল ছিল, এবং ভারতের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাদের শিরোপা জয়ের পথ সুগম করে। এই জয় ভবিষ্যতে Asia Cup-এ ভারতের আধিপত্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
১৯৮৮ – বাংলাদেশের মাটিতে দাপুটে জয় (ওডিআই)

১৯৮৮ সালের Asia Cup ছিল বিশেষ এক আয়োজন, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। এশিয়ার সেরা দলগুলিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় চারটি দল অংশগ্রহণ করেছিল — ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং স্বাগতিক বাংলাদেশ। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ভারত দারুণ ছন্দে ছিল এবং প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দেয়। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ভারত সহজেই ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা, যারা তখন এশিয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে পরিচিত ছিল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। ওপেনার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত এবং নবজোত সিং সিধু দারুণ শুরু এনে দেন। এরপর মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের অনবদ্য ব্যাটিং দলের জয় নিশ্চিত করে। ভারত মাত্র ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করে। এই জয়ের মাধ্যমে ভারত আবারও Asia Cup শিরোপা নিজেদের করে নেয়। এই ম্যাচে ভারতের শান্ত, পরিকল্পিত এবং চাপের মুখে খেলার দক্ষতা আরও একবার প্রমাণিত হয়।
১৯৯০/৯১ – ঘরের মাঠে জয় (ওডিআই)

১৯৯০/৯১ সালে প্রথমবারের মতো ভারত Asia Cup আয়োজন করে এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্স, কলকাতায়। ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার দেয়া ২০৫ রানের লক্ষ্য ভারত ৭ উইকেট হাতে রেখে অর্জন করে। ঘরের মাঠে এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য গর্বের মুহূর্ত এবং ভারতের Asia Cup সংগ্রহে আরেকটি শিরোপা যোগ করে।
১৯৯৫ – আবারো শারজায় (ওডিআই)

১৯৯৫ সালে Asia Cup আবারো শারজায় ফিরে আসে, যেখানে চারটি দল অংশগ্রহণ করে। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে ভারত শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়। শ্রীলঙ্কা ২৩১ রানের লক্ষ্য দেয়, যা ভারত ৪১.৫ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে অর্জন করে। ৮ উইকেটে এই জয় ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং পারফরম্যান্সের নিদর্শন। এই জয়ে ভারতের Asia Cup শিরোপার সংখ্যা দাঁড়ায় চারটিতে।
২০১০ – শ্রীলঙ্কায় প্রত্যাবর্তনমূলক জয় (ওডিআই)

১৫ বছর পর ভারত আবারো ২০১০ সালে Asia Cup জয় করে। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল ছিল রাঙ্গিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ভারত ২৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কাকে। শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারত ৮১ রানে জয়ী হয়। এই জয় ভারতের ওডিআই ফরম্যাটে দক্ষতা এবং প্রত্যাবর্তনের সামর্থ্যের সাক্ষ্য বহন করে।
২০১৬ – প্রথম টি২০I Asia Cup জয় (টি২০আই)

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো Asia Cup টি২০I ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়, সামনে থাকা টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল। ফাইনালে ভারত বাংলাদেশের মুখোমুখি হয় মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের ১২০ রানের লক্ষ্য সহজেই ৮ উইকেটে পার করে ভারত। এই জয় ভারতের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে শক্তিমত্তা প্রকাশ করে।
২০১৮ – সংযুক্ত আরব আমিরাতে রোমাঞ্চকর জয় (ওডিআই)

২০১৮ সালের Asia Cup অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ছয়টি দল নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত ও বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ ২২৩ রানের লক্ষ্য দেয়। ভারত মাত্র ৩ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য অর্জন করে। এই জয়ে Asia Cup-এ ভারতের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ হয়।
২০২৩ – রেকর্ড গড়া জয় (ওডিআই)

২০২৩ সালের Asia Cup পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে আয়োজন করে। ফাইনালে ভারত ও শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হয় কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। ভারতের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের সামনে শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারত ৬.১ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে লক্ষ্য ছুঁয়ে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয়। এই আধিপত্যমূলক পারফরম্যান্স এশিয়ান ক্রিকেটে ভারতের শ্রেষ্ঠত্বকে আরও দৃঢ় করে।